প্রায় দুই যুগ আগে ঢাকা-তাসখন্দ রুটে সরাসরি বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুনরায় এ রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর আলোচনা জোরদার হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ফ্লাইট চালু করতে বাংলাদেশ প্রান্ত থেকে চুক্তির বিষয়ে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন শুধু উজবেকিস্তানের জন্য অপেক্ষা।
আগামী বৃহস্পতিবার (১৮ মে) ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সভা ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) বসছে বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তান। দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হতে যাওয়া এফওসিতে আলোচনার টেবিলে থাকছে বিমান যোগাযোগ ইস্যু। এক্ষেত্রে ঢাকা-তাসখন্দ রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে চুক্তি নিয়ে উজবেকিস্তানের চূড়ান্ত অবস্থান জানতে চাইবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) বলছে, ২০০২ সালে প্রথম ঢাকা-তাসখন্দ রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করে উজবেকিস্তান এয়ারওয়েজ। অনিয়ম ও আইনি বিরোধের কারণে রুটটিতে ফ্লাইট চলাচল স্বল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। এ রুটে ফ্লাইট না থাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের দিল্লি, দুবাই বা ইস্তাম্বুল হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট নিতে হয়। প্রক্রিয়াটি খুব ব্যয়বহুল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তাসখন্দের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র বলছে, এফওসিতে বিমান যোগাযোগ তথা ঢাকা-তাসখন্দ রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া গুরুত্ব পাবে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি করার বিষয়টি। এক্ষেত্রে চুক্তি করা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে চাইবে উভয়পক্ষ। এর বাইরে ঢাকায় উজবেক মিশন চালু, দ্বৈতকর পরিহার, যৌথ উদ্যোগে উজবেকিস্তানে সার কারখানা স্থাপন, ফার্মাসিউটিক্যালস ও টেক্সটাইল খাতে পারস্পরিক সহযোগিতাসহ পর্যটন খাত নিয়ে আলোচনা হবে।
বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে তাসখন্দের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার বাখরমজন অ্যা’লয়েভ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ-উজবেকিস্তানের প্রথম এফওসি তাসখন্দে হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় এফওসি আগামী ১৮ মে ঢাকায় হবে। এফওসি করতে উজবেক ডেপুটি ফরেন মিনিস্টারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বুধবার (১৭ মে) ঢাকায় আসবেন।
বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা উজবেকিস্তানে করার বিষয়ে আলোচনা হবে। একইসঙ্গে পর্যটন ইস্যুতে কথা হবেপররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, মূল আলোচনা হচ্ছে, ভিসা ওয়েভার অ্যাগ্রিমেন্ট নিয়ে। এটা ফাইনালাইজ হবে। তবে এখন সাইন হবে না। এছাড়া ঢাকায় উজবেকিস্তানের মিশন খোলার প্রসঙ্গ আসবে। সরাসরি বিমান যোগাযোগের বিষয়টি আসবে, সরাসরি ফ্লাইট না হলেও কোড শেয়ারিং করার বিষয়টি হতে পারে। গত বছর উজবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী যৌথ সার কারখানা স্থাপনের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন, এ প্রসঙ্গটা থাকবে।
আলোচনায় ঢাকায় তাসখন্দের মিশন চালুর প্রসঙ্গ থাকবে। উভয় দেশের মধ্যে ফার্মাসিউটিক্যালস ও টেক্সটাইল খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ে কথা হবে। এছাড়া উজবেকিস্তানের তুলা আমদানি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে
মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা উজবেকিস্তানে করার বিষয়ে আলোচনা হবে। একইসঙ্গে পর্যটন ইস্যুতে কথা হবে।
জানতে চাইলে উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরাসরি বিমান চলাচল চুক্তির বিষয়টি উজবেকিস্তান যাচাই-বাছাই করছে। চুক্তির বিষয়ে তারা তাদের বক্তব্য দেবে। এয়ার কানেক্টিভিটিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। দ্বৈতকর পরিহারের বিষয়টি আমরা চাইব। ঢাকায় তাসখন্দের মিশন চালুর প্রসঙ্গ থাকবে। উভয় দেশের মধ্যে ফার্মাসিউটিক্যালস ও টেক্সটাইল খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা থাকবে। উজবেকিস্তানে তুলা পাওয়া যায়। তুলা আমদানি নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।