বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন

নতুন রূপে সাইবার অপরাধ, ঝুঁকিতে নারী ও শিশুরা

  • টাইম আপডেট : রবিবার, ২১ মে, ২০২৩
  • ২১ কত বার দেখা হয়েছে
নতুন রূপে সাইবার অপরাধ, ঝুঁকিতে নারী ও শিশুরা

বরাবরের মতো অন্তর্জালের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হলেও, গত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে কমছে সাইবার বুলিং সংশ্লিষ্ট অপরাধের ঘটনা। যেমন অনলাইন ও ফোনে বার্তা পাঠানো, পর্নোগ্রাফি, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার ও ছবি বিকৃতি। তবে অনলাইনে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস, পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণা, ভুয়া অ্যাপ ব্যবহার, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচার ও আইডি হ্যাকিংয়ের শিকারের মতো অপরাধ বেড়েছে। এতে বেশি ঝুঁকিতে থাকে নারী ও শিশুরা।

শনিবার (২০ মে) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) কর্তৃক সাইবার স্পেসে ভুক্তভোগীদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৩ প্রতিবেদন এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ধারাবাহিকভাবে পঞ্চমবারের মতো প্রকাশিত এই প্রতিবেদন বলছে, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়েছে।

Celebrating novo mobile

প্রতিবেদনে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাফে। সেখানে তথ্য বিশ্লেষণে ‘অন্যান্য’ অপরাধের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে বলে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালের প্রতিবেদনে যেখানে অন্যান্য অপরাধ ছিল ১ দশমিক ৮১ শতাংশ; ২০২৩ সালে প্রতিবেদনে এটি ৩৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে নানা মাত্রিক প্রতারণা। এই প্রতারণাগুলো হচ্ছে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস ও অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে।

তবে বরাবরের মতো অন্তর্জালের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হলেও, বিগত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে কমছে সাইবার বুলিং সংশ্লিষ্ট অপরাধের ঘটনা। যেমন: অনলাইন ও ফোনে বার্তা পাঠানো, পর্নোগ্রাফি, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার ও ছবি বিকৃতি। এ ধরনের অপরাধ ২০২২ সালে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য আইডি হ্যাকিংয়ের ঘটনাগুলোও ধারাবাহিকভাবে কমলেও আর্থিক সংশ্লিষ্ট প্রতারণা থেমে নেই। ২০২২ সালে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

অপর দিকে ভুক্তভোগীদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশই নারী। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে অভিযোগের হার দিন দিন কমছে। ২০১৮ থেকে পাঁচটি জরিপে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের মাঝে কতজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন, তার ফলাফল উদ্বেগজনক। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভুক্তভোগীদের মধ্যে অভিযোগকারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। ২০১৮ সালের জরিপে যেখানে অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ, ২০২৩ সালে গিয়ে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে।

এ ছাড়া ২০২৩ সালের জরিপে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের তুলনায় ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি (২ শতাংশের বেশি) অপপ্রচারের শিকার হয় শিশুরা। বয়সভিত্তিক অপরাধের ধরনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে তরুণরা (১৮ থেকে ৩০ বছর) সর্বোচ্চ (১২ শতাংশের বেশি) একই ধরনের অপরাধের শিকার।

সিক্যাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ জরিপে ভুক্তভোগীদের ৭৫ শতাংশের বয়সই ছিল ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ২০১৮ সালের জরিপ থেকে এ পর্যন্ত একাধারে এই বয়সী ভুক্তভোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচার ও আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার।

আলোচনায় প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে অন্তর্জালে শিশু ভুক্তভোগীদের হার ক্রমেই বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বক্তারা। তাদের প্রত্যাশা, ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ পরিস্থিতির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে ডিজিটাল অবকাঠামো রক্ষা এবং নাগরিক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হবে। এ জন্য সর্বাত্মক জনসচেতনতা গড়ে তুলে প্রযুক্তি ব্যবহারে নাগরিকের অভ্যাস ও আচরণগত উন্নয়নের মাধ্যমে সিক্যাফ জাতীয় নিরাপদ সাইবার সংস্কৃতি গড়ে তোলার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানিয়ে এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন আলোচকরা। সাইবার স্পেস এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে।

সংগঠনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন পেশ করেন গবেষণা পর্ষদের সদস্য স্বর্ণা সাহা। সিসিএস কার্যনির্বাহী সদস্য খালেদা আক্তার লাবণীর সঞ্চালনায় প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা করেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন-আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান, সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতাবিষয়ক জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশের সদস্য প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) গবেষণা কর্মকর্তা নাহিয়ান রেজা সাবরিয়েত। আর ভিডিও বার্তায় দিয়ে আলোচনায় অংশ নেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিজিডি ই গভ সার্ট প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান।

 

নিউজটি শেয়ার করুন সোশ্যাল মিডিয়াতে..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো খবর জানতে..