একদিকে ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে চাপের মধ্যে আছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। এর মধ্যেই ঘনিয়ে আসছে (১৪ মে) দেশটির প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন। অন্যদিকে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য হতে বাধা দেওয়ার কারণে পশ্চিমাদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন তুরস্কের এই ‘লৌহমানব’।
সম্প্রতি মস্কো টাইমসে ভ্লাদা স্তানকোভিচের এক নিবন্ধে বলা হয়, ক্রেমলিনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন নেতা এরদোগান। রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শুভাকাঙ্ক্ষীর তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তিনি। তুরস্ক-রাশিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্ক খুব কম সময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। এরদোগান মূলত পুতিনের ফাঁদে পড়েন ২০১৬ সালে।
২০১৫ সালেও এই দুদেশের এমন গলায় গলায় ভাব ছিল না। ওই বছর নভেম্বরে অবৈধভাবে তুরস্কের আকাশে ঢুকে পড়ে রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমান। এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তুরস্ক। তুর্কি নাগরিকদের রাশিয়ার ভ্রমণে যাওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হয়। সেই সঙ্গে রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানিও কমিয়ে আনা হয়।
এ সম্পর্ক পাল্টে যায় ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই। এদিন সামরিক অভ্যুত্থান হয় তুরস্কে। তবে তা ব্যর্থ হয়। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করে এরদোগানের প্রশংসা করেন পুতিন। আর পুতিনের বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ।
সেই থেকে শুরু। পুতিনের প্রশংসায় গলে যান এরদোগান। রাশিয়ার সঙ্গে শুরু হয় সুসম্পর্ক। বীজ বোনা হয় নতুন কূটনীতির। ধীরে ধীরে রাশিয়ার ওপরে আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এরদোগান সরকার। পুতিনের ভূয়সী প্রশংসায় কাবু হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ব্যস্ত হয় তুরস্ক। অভ্যুত্থানের এক মাসের মাথায় রাজকীয় এক ভোজে এরদোগানকে সেন্ট পিটার্সবার্গে আমন্ত্রণ জানান পুতিন। এতে আরও বিগলিত হন এরদোগান।
এর পরের বছর রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র কিনে তুরস্ক। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বলয় থেকে দূরে সরে যায় তুরস্ক। আর গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দুই কূলই হারান এরদোগান। একদিকে জাতিসংঘে রাশিয়ার সমালোচনা করে বিপাকে পড়েন। অন্যদিকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও সমাধান করতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের মনও জয় করতে পারেননি তিনি।
মূলত এরদোগানকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছে পুতিন। আর পুতিনের দুর্দান্ত পররাষ্ট্র কৌশলের আড়ালে স্বকীয়তা হারিয়েছেন এরদোগান। অবশেষে ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পর নিজেকে একজন ‘অপদার্থ’ ও ‘অকর্মণ্য’ নেতা হিসেবে খুঁজে বের করলেন এরদোগান। সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন সম্প্রতি দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে লিখেছেন— এরদোগান আরও একবার প্রমাণ করলেন ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ তুরস্ক’।
সম্প্রতি ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর তুরস্কে সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি বিঙ্কেন। এ সময় দেশটিকে ১০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এই সহায়তা একটু হলেও চিন্তার ভাজ ফেলবে এরদোগানের কপালে। রাশিয়া থেকে মার্কিন বলয়ে ফিরে আসবেন কিনা আরও একবার ভাবতে বাধ্য করবে এরদোগানকে।
window.fbAsyncInit = function() {
FB.init({
appId : ‘1488263831660245’,
xfbml : true,
version : ‘v11.0’
});
FB.AppEvents.logPageView();
};
(function(d, s, id){
var js, fjs = d.getElementsByTagName(s)[0];
if (d.getElementById(id)) {return;}
js = d.createElement(s); js.id = id;
js.src = “https://connect.facebook.net/en_US/sdk.js”;
fjs.parentNode.insertBefore(js, fjs);
}(document, ‘script’, ‘facebook-jssdk’));