প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে একটি বিমান চলাচল কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে এর ভৌগলিক-কৌশলগত সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।
আজ বুধবার ঢাকায় এভিয়েশন সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনে এক ভিডিও ভাষণে তিনি রোডম্যাপের ব্যাপারে কথা বলেন। যুক্তরাজ্য-ফ্রান্সের সহযোগিতায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ এভিয়েশন সামিট-২০২৩’ এর আয়োজন করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভৌগলিক-কৌশলগত সুবিধাকে পুঁজি করে কীভাবে দেশকে একটি বিমান চলাচল কেন্দ্রে পরিণত করতে পারি, সেজন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এই শীর্ষ সম্মেলনকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। কারণ, এটি এই অঞ্চলে একটি বিমান চলাচল কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে আইসিএও-এর সদস্যপদ পাওয়া মাত্রই আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমকে সংযুক্ত করতে বাংলাদেশকে একটি ‘এভিয়েশন হাব’- এ পরিণত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পরপরই এই পদক্ষেপ স্থগিত করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি এভিয়েশন হাবের উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। গত এক দশকে আমাদের বিমানবন্দর, নিরাপত্তা এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং উন্নত করার জন্য অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তাবায়ন করেছি।’
বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে শেখ হাসিনা যাত্রী ও মালামাল উভয়ের জন্যই একটি উন্নত ও টেকসই বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারি সংস্থা, এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল পক্ষকে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সরকার ই-ভিসা সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে-যা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে ও পর্যটনে আসা যাত্রীদের সুবিধা দেবে ও ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সম্ভাবনাময় বিমান শিল্পে দক্ষ লোকবল প্রয়োজন। আমাদের যুবকদের অবশ্যই পাইলট, বিমান প্রকৌশলী, মেকানিক, ক্রু ও আরো অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তার সরকারের প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি দেশের বিমান শিল্পে লোকবলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বিমান শিল্প ইতোমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডি-কার্বনেশন এবং টেকসই এভিয়েশন জ্বা ালানি হল এমন বিষয়- যার জন্য বিনিয়োগ, বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ ও উন্নত বিমান চালনাকারী দেশগুলোর সমর্থন প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, এ যাত্রায় সমর্থন করার জন্য এয়ারবাসের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স প্রস্তাবিত বিমান চালনা অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে- এইচএসআইএ সম্প্রসারণ প্রকল্প (পর্যায়-১), জেনারেল এভিয়েশন হ্যাঙ্গার নির্মাণ, আইএসআইএ-তে ফায়ার স্টেশনের উত্তর প্রান্তে হ্যাঙ্গার অ্যাপ্রন ও অ্যাপ্রন, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের জোরদারকরণ, কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন (পর্যায়-১), সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের জোরদারকরণ এবং এইচএসআইএ-তে জন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি অব বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইচএসআইএ সম্প্রসারণ প্রকল্পের (ফেজ-১) অধীনে নির্মিত তৃতীয় টার্মিনালটি অতিরিক্ত ১২ মিলিয়ন যাত্রী ও ৪ মিলিয়ন টন কার্গো পরিচালনার ক্ষমতা তৈরি করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির পরিবর্তন জনগণের জন্য ভ্রমণের সুযোগ বাড়াতে ও এয়ারলাইনসের জন্য নতুন রুট ও বাজার উন্মুক্ত করতে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশ যখন ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে-তখন বিমান চলাচলের বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন বেড়েছে, তেমনি এয়ার কার্গোর গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে। এয়ার কার্গোর বাজার প্রতি বছর ৮ শতাংশ হারে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বিশ্বের গড় বৃদ্ধির হারের তিনগুণ। এটি আমাদের দেশে একটি নিবেদিত জাতীয় কার্গো পরিচালনার বিরাট চাহিদার গুরুত্বকেই স্পষ্ট করে তোলে। এই সবকিছু বিবেচনায় রেখে, এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে-যেখানে বিমান পরিচালনাকারীদের আরও বেশি কিছু করতে হবে।’
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী ও ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী বক্তব্য রাখেন।