বাংলাদেশ-উজবেকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং পর্যটন খাত সম্প্রসারণে পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট পরিষেবা চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
শুক্রবার বিকালে সালমান এফ রহমানের গুলশানের কার্যালয়ে উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাখরম অ্যালোয়েভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করতে আসলে তিনি এ আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকালে উজবেকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ-উজবেকিস্তান সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং ভিসা সহজীকরণ হলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা সফর করে বিনিয়োগের ক্ষেত্র বের করতে পারবেন। সরকার টু সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী টু ব্যবসায়ী যোগাযোগ বৃদ্ধি হবে। সেই সাথে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক সুবিধার জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোকে খুঁজে বের করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।’
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়াসহ ১৫২টিরও বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার বিশাল সুযোগ রয়েছে।’
উজবেকিস্তানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ও প্রবৃদ্ধির অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘ঢাকা-তাসখন্দ সম্পর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দু বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা। দেশটিতে টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। তৈরি পোশাক, ওষুধ ও আইসিটি পণ্যের বড় বাজার হতে পারে উজবেকিস্তান। দু’দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদার হবে।’
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন খাতের বিকাশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করেছেন এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজ এবং সুবিধা ঘোষণা দিয়েছেন। তাই উজবেকিস্তানের বিনিয়োগকারীরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ করতে পারেন।’
‘বাণিজ্য সম্প্রসারণে উজবেকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুসহ বাংলাদেশিদের সহজ শর্তে ভিসা সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছেন বাংলাদেশে সফররত উজবেকিস্তান উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাখরোম আলয়েভ।’
সাক্ষৎকালে উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল সূচকে সাফল্য অর্জন করেছে। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য বিশ্বে সুনাম ধরে রেখেছে।’ তাই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের উজবেকিস্তানে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ এবং দৃঢ় অবস্থানে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
বৈঠকে উজবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাখরোম আলয়েভ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বিস্তৃত করার সময় এসেছে এখন। পরিবহন ও যোগাযোগ একটি উদ্বেগের বিষয় ছিল, তবে আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদার করার জন্য প্রস্তুত আমরা।’
প্রসঙ্গত, মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তান। স্থলবেষ্টিত দেশটিতে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মানের তুলা উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশের পোশাক খাতে ক্রমবর্ধমান সুতার চাহিদা মেটাতে বছরে ৮৫ লাখ বেল তুলার প্রয়োজন পড়ে। বিপরীতে উৎপাদন হয় মাত্র পৌনে ২ লাখ বেল। ঘাটতি মেটাতে বছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকার তুলা আমদানি করতে হয়; যা বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তুলা আমদানিকারক দেশে পরিণত করেছে। এ অবস্থায় ঢাকা-তাসখন্দের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাড়াতে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশ সফর করছেন উজবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।