পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার ইসলামাবাদে একটি আদালত চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করলে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পাকিস্তানের কয়েকটি প্রদেশে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ইন্টারনেটের ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। খবর ডনের।
বড় বড় শহরের রাস্তায় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িতে তারা হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও আগুন ধরিয়ে দেয়। সন্ধ্যার পর গোটা পাকিস্তানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
পিটিআই কর্মীরা ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, করাচি, গুজরানওয়ালা, ফয়সালাবাদ, মুলতান, পেশাওয়ার ও মারদানে বিক্ষোভ করে।
ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী-সমর্থকরা রাওয়ালপিন্ডির সেনা দপ্তরে হামলা চালিয়েছে। এর আগে লাহোর সেনানিবাসের অফিসার্স কোয়ার্টারেও তারা হামলা চালায়।
ডন পত্রিকার অনলাইনে শেয়ার করা সাংবাদিক আসাদ আলী তুরের টুইটার ভিডিও পোস্টে দেখা যায়-মুখে রুমাল বেঁধে লাঠিসোঁটা নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির সেনা দপ্তরের সামনে জড়ো হতে থাকেন পিটিআই নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এর কিছুক্ষণ পরই একজন দুজন করে সেনা দপ্তরের প্রধান ফটকের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন তারা।
একপক্ষ প্রধান গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। আরেক পক্ষ প্রধান গেটের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল প্রতীক ভেঙে ফেলেন। সব মিলিয়ে ১ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে সেনানিবাসের ভেতরে ঢুকতে দেখাল যায় দুঃসাহসী পিটিআই বিক্ষোভকারীদের। এ সময় প্রধান ফটকে নিয়মিত প্রহরারত কোনো সেনা সদস্যকে দেখা যায়নি।
এর প্রায় ঘণ্টা দেড়েক আগে লাহোর সেনানিবাসের অফিসার কোয়ার্টারেও ভাঙচুর চালান পিটিআই সমর্থকরা। সাংবাদিক মুর্তজা আলি শাহের ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা ভিডিওতে ভাঙচুর চালানোর দৃশ্য দেখা যায়।
টুইটারে ভিডিও শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘পিটিআই সমর্থকরা লাহোর ক্যান্টনমেন্টে সামরিক অফিসারের বাড়িতে ভাঙচুর করেছেন।’
ভিডিওতে দেখা যায়, আংশিকভাবে মুখ ঢেকে রাখা একদল লাঠিসোঁটা নিয়ে গেট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করছে। পরে দেওয়ালে তাদের আঘাত করতে দেখা যায়। ভিডিওতে সেনা কমান্ডারের বাড়ির ভেতর থেকে আসবাবপত্র বের করে পুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়। কোয়েটায় ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আসকারি চেক পোস্টের কাছে জড়ো হন পিটিআই সমর্থকরা।
এ সময় কিছ সেনা সদস্যকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়। পেশোয়ারে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরের বাইরেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পিটিআই কর্মীরা লাক্কি মারওয়াত জেলায় রাস্তায় নেমেছেন। এখানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের প্রাদেশিক সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইকবাল।
করাচিতে নার্সারি এলাকার কাছে পিটিআই কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা পাথর ছোড়ে এবং রাস্তার বাতি ভেঙে ফেলেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রাতে ইসলামাবাদ পুলিশ জানায়, রাজধানীতে বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় ৪৩ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অন্যদিকে পাকিস্তানের টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ জানিয়েছে, সারাদেশে মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইন্টারনেট বিভ্রাট পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান নেটব্লকস জানিয়েছে, ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের গ্রেফতারের মধ্যে পাকিস্তানজুড়ে টুইটার, ফেসবুক ও ইউটিউবের ব্যবহার সীমিত ছিল। কিছু অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘রিয়েল টাইম নেটওয়ার্ক ডেটায় দেখা গেছে, সব মোবাইল এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর প্রভাব পড়েছে।’