চলতি হজ মৌসুমে ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য বিমানের যে প্রকৌশলীদের বিদেশে পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে কারো কারো প্রি-ফ্লাইট ইন্ট্রোডাকশন ট্রেনিংয়ের (পিএফআই) সনদ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
পিএফআই সনদ মূলত এমন একটি সনদ, যা থাকলে প্রমাণিত হয় যে, একজন প্রকৌশলী তার কাজ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন।
সেই সঙ্গে উড়োজাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটি, এমনকি উড্ডয়ন উপযোগী উড়োজাহাজের প্রত্যয়ন দিতে তিনি সক্ষম। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এই সনদ অর্জন করতে হয়।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে এই পিএফআই লাইসেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এভিয়েশন খাতের দুটি প্রধান শাখা: উড়ান ও রক্ষণাবেক্ষণ। পাইলটের কাজ বিমান চালানো, আর রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীর (মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার) কাজ উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ করা।
রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীর দায়িত্ব বিমানের যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণ করা যাতে তা কোনোভাবে বিকল না হয়। সেই সঙ্গে উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, বিভিন্ন ধরনের শিডিউল, আনশিডিউল চেক করাও তার দায়িত্ব।
উড়োজাহাজের যাত্রী ও পাইলটদের জীবন এবং তাদের নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছানোর অনেক কিছুই নির্ভর করে প্রকৌশলীর ওপর। রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী যদি কোনো ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন, তাহলে উড়োজাহাজের যাত্রী ও পাইলটদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
২০১৯ সালে পিএফআই সনদ ছাড়া বিমানের প্রকৌশলীদের সৌদি আরবে পাঠানোর কারণে জেদ্দা থেকে হাজিদের ফিরতি ফ্লাইটে বিলম্ব হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন হাজিরা।
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন ছিল, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিমের কাছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রকৌশল টিম রয়েছে, তাতে প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রকৌশলীরাও আছেন। বিমানের এখনকার প্রকৌশল দলটি শুধু এই অঞ্চলের নয়, এশিয়ার মধ্যেই সেরাগুলোর একটি। আমি আবারও বলছি, আমাদের যে প্রকৌশল দলটি, সেটি শুধু এই উপমহাদেশে নয়, পুরো এশিয়ার মধ্যেই সেরাদের একটি।
তিনি বলেন, আমাদের যে ফ্লাইটই যাবে, তাতে প্রধান প্রকৌশলী, পরিচালক, প্রকৌশল বিভাগের যারা আছেন, তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। আমাদের প্রধান প্রকৌশলী ৩২ বছর ধরে বিমানের এই বিভাগে যুক্ত আছেন।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম বলেন, সৌদি আরবে আগে আমাদের প্রকৌশল সহায়তা দিত ওমান এয়ারলাইন্স। এরপর কুয়েত এয়ারলাইন্স। সৌদি আরবে এখন অন্য কাউকে তা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এখন সৌদি আরবের প্রকৌশলীরাই আমাদের প্রকৌশল সহায়তা দেবেন। কুয়েতের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি ছিল, তা আমরা বাড়াতে পারছি না। সেজন্য আমরা সাময়িকভাবে দেশীয় প্রকৌশলী পাঠিয়ে কাজটা করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, এটি একটা কমপ্লায়েন্স ইস্যু। উড়োজাহাজের প্রকৌশলীদের পিএফআই সনদ অবশ্যই থাকতে হবে। সনদবিহীন কোনো প্রকৌশলী যদি উড়োজাহাজ প্রত্যয়ন করেন, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কোনো দুর্ঘটনার দায়-দায়িত্ব তখন বিমা কোম্পানিও নেবে না, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও নেবে না। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
পিএফআই সনদ কেন জরুরি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেকোনো এয়ারক্রাফট সার্টিফাই (প্রত্যয়ন) করার জন্য প্রকৌশলীদের সনদধারী হতে হবে। এবং এই সনদ পেতে গেলে সিভিল এভিয়েশনে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। কাজেই এটি ছাড়া কেউ গেলে, সে যোগ্যতাহীন এবং এটি অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।