বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৫১ পূর্বাহ্ন

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাই, তবে তদন্ত চলবে: ট্রুডো

  • টাইম আপডেট : শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১৮ কত বার দেখা হয়েছে
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাই, তবে তদন্ত চলবে: ট্রুডো

কানাডার নাগরিক ও সেখানকার শিখ ধর্মাবলম্বীদের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি ব্যাপক টানাপোড়েন চলছে কানাডা ও ভারতের মধ্যে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, তার দেশ ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ও গভীর করতে আগ্রহী, তবে হরদীপ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে দেওয়া এক ভাষণে ভারত-কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক ইস্যুতে নিজ দেশের অবস্থান স্পষ্ট করেন।

নিজ বক্তব্যে ট্রুডো বলেন, ‘ভারত একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক প্লেয়ার। ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের সঙ্গে কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক নীতি আমরা গত বছর পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেছি। সেই নীতি অনুসারে দেশের স্বার্থেই ভারতের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে এবং আমরা এ ব্যাপারে মনযোগী।’

‘তবে, কানাডার আইন ও সংবিধানকে লঙ্ঘন করে—এমন কোনো কর্মকাণ্ড আমরা সমর্থন করতে পারি না। যা ঘটেছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত আমরা চাই এবং এক্ষেত্রে কানাডার সঙ্গে ভারতের কাজ করা প্রয়োজন।’

গত জুনে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যের রাজধানী ভ্যানকুভারে একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) সামনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হরদীপ সিং নিজ্জর ছিলেন দেশটিতে বসবাসকারী শিখদের একজন নেতা। ১৯৭৭ সালে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধর জেলা থেকে কানাডা গিয়েছিলেন হরদীপ, পরে সেখানাকার নারিকত্বও অর্জন করেন তিনি।

এদিকে, শিখদের ঘোষিত রাষ্ট্র খালিস্তান কায়েমের জন্য তৎপর দুই রাজনৈতিক গোষ্ঠী খালিস্তান টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিস কানাডা শাখার একজন জ্যেষ্ঠ নেতা হরদীপ ছিলেন ভারতের একজন তালিকাভুক্ত ফেরার আসামী। হরদীপকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করাতে আগ্রহী ছিল ভারত।

বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার কারণে খালিস্তান টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিস— দুই সংগঠনই ভারতে নিষিদ্ধ; তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বেশ সক্রিয় খালিস্তান টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিস।

ভারতের পরেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিখ বসবাস করেন কানাডায়। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশই শিখ।

বিগত কয়েক বছরে ভারতের একাধিক আহ্বান সত্ত্বেও খালিস্তান টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিসের কর্মকান্ডে কখনও বাধা দেয়নি কানাডার সরকার। এই ইস্যুতে দেশটির বক্তব্য— যেহেতু কানাডার সংবিধানে শান্তিপূর্ণ অহিংস আন্দোলনকে বৈধ, তাই এক্ষেত্রে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয় সরকারের পক্ষে।

ভারতের সঙ্গে কানাডার সাম্প্রতিক যে দ্বন্দ্ব, তার সূত্রপাত এখান থেকেই। গত ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনেও দুই দেশের শীতল কূটনৈতিক সম্পর্কের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল।

জি-২০ সম্মেলন শেষে নয়াদিল্লি থেকে ফেরার এক সপ্তাহ পর, ১৮ সেপ্টেম্বর ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন।

কানাডার জন্য এই ঘটনাটি যে তীব্র অবমাননাকর, তা বোঝাতে গিয়ে পার্লামেন্ট ভাষণে ট্রুডো বলেন, ‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।’

ভারতের সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীন, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে, এই ঘটনা (হরদীপ হত্যা) সেই মৌলিক নিয়মনীতির পরিপন্থী।’

ট্রুডো পার্লামেন্টে এই অভিযোগ তোলার পরদিনই কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিসি উইং (র) কানাডা শাখার প্রধানকে বহিষ্কারাদেশ দেয় কানাডীয় সরকার।

এদিকে ট্রুডোর এই বক্তব্যের পর থেকে নজিরবিহীন টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছে কানাডা ও ভারত। নয়াদিল্লি এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে, সেই সঙ্গে ট্রুডোর বক্তব্য এবং ভারতীয় শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ ভারত পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পরের দিনই দিল্লির কানাডা দূতাবাসের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

Celebrating novo mobile

নিউজটি শেয়ার করুন সোশ্যাল মিডিয়াতে..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো খবর জানতে..